Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

উপজেলার ঐতিহ্য

১. শৈলকুপার শাহী মসজিদ ও মাজারঃ কুমার নদের তীরে অবসিহত শৈলকুপা শাহী মসজিদ দক্ষিণবঙ্গে সুলতানী আমলের সহাপত্যকীর্তির একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। মসজিদটি দরগাপাড়য় অবসিহত। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এ মসজিদের আয়তন (ভিতরের দিকে) ৩১.৫^২১ ফুট। দেয়ালগুলো প্রায় ৫.৫ ফুট প্রশসত। চার কোণে আছে চারটি মিনার। এগুলো গোলাকার এবং বলয়াকারে স্ফীতরেখা (ব্যান্ড) দ্বারা অলংকৃত। মিনারগুলো মসজিদের অনেক উপরে উঠে গেছে। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে দু'টি করে প্রবেশ পথ আছে। পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের উভয় পাশে একটি করে সরত মিনার আছে এবং এগুলো কোণের মিনারের চেয়ে কিছু নিচু। মসজিদের কার্ণিশ ঈষৎ বাঁধানো; ভিতরে পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মেহরাব। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি আকারে বড়। মসজিদের ভিতরে পাঁচ ফুট উঁচু দুটি সতম্ভ আছে। এগুলোর উপরে আছে ইটের তৈরি খিলান। এ দুটো সতম্ভ ও চার পাশের দেয়ালের উপর নির্মিত হয়েছে ছয়টি গম্বুজ। এগুলো আকারে বেশ ছোট। মসজিদটি প্রধানতঃ ইটের তৈরি। এ মসজিদে এত সংস্কার ও সংযোজন হয়েছে যে, এর আদি কাঠামো কি ছিল তা সঠিকভাবে নিরতপণ করা সহজ নয়। কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথ ও কোণের মিনারগুলো সম্ভবতঃ পরবর্তীকালের সংযোজন। তবে এটি যে সুলতানী আমলের মসজিদ তা সহজেই বোঝা যায়। মসজিদের পূর্ব দিকে অনুচ্চ প্রাচীর বেষ্টিত ৪৫^৩০ ফুট আয়তনের একঢি মাজার আছে। সহানীয় লোকদের মতে এটি শাহ্ মোহাম্মদ আরিফ-ই-রব্বানী ওরফে আরব শাহ্র মাজার। এ মাজারের কাছে আরও ছয়জন আউলিয়ার মাজার আছে। মসজিদ বা মাজারে কোন শিলালিপি নেই।

২. কামান্না ২৭ শহীদের মাজারঃ ১৯৭১ এর মুওিুযুদ্ধ শৈলকুপা ইতিহাস হয়ে আছে। ৫ এপ্রিল গাড়াগঞ্জ যুদ্ধ, ৪ আগষ্ট আলফাপুরের যুদ্ধ, ১৩ অক্টোবর আবাইপুরের যুদ্ধ, ২৬ নভেমবর কামান্নার যুদ্ধ এবং ৮ এপ্রিল, ৬ আগস্ট, ১৭ আগষ্ট ও ১১ নভেম্বর শৈলকুপা থানা আত্রুমণের মাঝ দিয়েই শৈলকুপা শত্রতমুওু হয়। মুক্তিসেনারা উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা। শৈলকুপায় পাক-হানাদার ও তাদের সহযোগীরা চালিয়েছে নির্বিচারে হত্যা, অগ্ণিসংযোগ, লুটপাট। যার জলমত সাক্ষী হয়ে রয়েছে কামান্না ও আবাইপুরের হত্যাযজ্ঞসহ আরো বেশ কিছু নারকীয় ঘটনা। কামান্না যুদ্ধ এসবের সর্বাধিক গুরতত্ববাহী। ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর ভোর রাতে কামান্না গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞে নিহত হন ২৭ জন বীর মুওিুসেনা। আর আহত হন অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী। চৌকস ও সাহসী ৪২ জন মুওিুযোদ্ধা প্রশিক্ষন শেষে ভারত থেকে কামান্নার মাধব চন্দ্রের বাড়িতে আশ্রয় নেন। মাগুরার শ্রীপুর, মাগুরা সদর ও শৈলকুপা উপজেলায় এঁদের বাড়ি। শৈলকুপার মালিথিয়া গ্রামের আলমগীর ও শ্রীপুরের আবুবকর ছিল এদের মধ্যে প্রধান।

৩. শৈলকুপা রামগোপাল মন্দির: বল্লাল সেনের সময় মুন্সী বলরাম দাস শৈলকুপায় রাজ্য স্থাপন করেন। তৎকালে জনৈক সন্ন্যাসীর প্রচেষ্টায় রামগোপাল বিগ্রহের মন্দির স্থাপিত হয় এবং বলরাম দাসের বংশধরগণ এর পরিচালনা করেন। বর্তমানে এখনও তাহার কিছু স্মৃতি বিদ্যমান মাত্র।

৪. এনএম খান পাবলিক লাইব্রেরি ও ভিলেজ হল: ১৯৩৬ সালে এনএম খান পাবলিক লাইব্রেরি ও ভিলেজ হলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন আইসিএস অফিসার বৃহত্তর যশোর জেলার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট জনাব নিয়াজি মোহাম্মদ খান (সংক্ষেপে এনএম খান) কাঁচেরকোল সফরে এসে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার জন্য ২০০০ টাকা অনুদান প্রদান করেন। এই টাকা দিয়ে পরে ১৯৪২ সালে তখন ঐতিহাসিক লাইব্রেরি ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এ কারণে তাঁর নামে নামকরণ করা হয় এনএম খান পাবলিক লাইব্রেরি এন্ড ভিলেজ হল। লাইব্রেরির সংগ্রহে প্রচুর দুর্লভ বই ছিল। ব্রিটিশ আমলে কলকাতা থেকে দৈনিক পত্রিকা এ লাইব্রেরিতে অসতো। মুসলমান অধ্যুষিত শিক্ষায় পশ্চাদপদ এ এলাকায় জ্ঞানের আলো বিস্তারে লাইব্রেরিটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। এখানে নবীন প্রবীণ সব ধরনের পাঠক বই ও খবরের কাগজ পড়ার জন্য আসতেন। এখনও লাইব্রেরিটি এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে জ্ঞানের প্রদীপ ছড়িয়ে দিতে বিশেষ ভূমি রাখছে।

৫। হরিহরার গড়: এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল। ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলা সদর থেকে ৩ কিমি উত্তর-পূর্ব দিকে হরিহরা মৌজায় অবস্থিত। হরিহরা ও পূর্বপার্শ্বস্থ নাগপাড়া গ্রামের ব্যাপক এলাকা জুড়ে প্রায় ৫০টি উঁচু ভিটার সমন্বয়ে হরিহরার গড় বিস্তৃত। এ গড়ের উত্তরাংশে নিম্নভূমিতে পরিখাবেষ্টিত বৃহদাকার কয়েকটি ভিটা হরিহর রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ বলে চিহ্নিত। গড় এলাকায় সর্বত্র প্রাচীনকালের বাসিন্দাদের ব্যবহূত নানা ধরনের মৃৎপাত্র ও মৃৎশিল্পের নিদর্শন পাওয়া যায়। বাংলার স্বাধীন সুলতানি আমলের স্থাপত্যে ব্যবহূত টেরাকোটার ন্যায় এগুলো নানা ধরনের ফুল-ফল, লতা-পাতা ও জ্যামিতিক নকশায় তৈরি। এখান থেকে সংগৃহীত বেশকিছু টেরাকোটা বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত আছে।